সোমবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

সন্ত্রাসীদের ভবিষ্যৎ

লেখক
- কে সি মিলান
এক ধাপ হলেও বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে যে উন্নতি সাধন করেছে তা হলো মোবাইল স্মার্ট ফোনের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার।
মাত্র ছয়/সাত বছর আগেও গ্রামের মানুষেরা ভাবতেও পারে নি যে তারা একটি মোবাইল ফোনের মালিক হবে আর তা ব্যবহার করে দূরের কারও সাথে কথা বলবে।
কিন্তু এই ছয়/সাত বছরের মধ্যেইে এখন বাস্তবতা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে গ্রামে গঞ্জেও এমন কোন লোক পাওয়া খুবই দূষ্কর যার হাতে মোবাইল ফোন নেই।
গ্রামের অনেক লোকই আজকাল এতটাই ভাগ্যবান যে তারা শুধু সাধারণ ফোন নয় স্মার্ট ফোন ব্যবহার করে ইন্টারনেটের নানাবিধ সুবিধা ভোগ করছে।
শহুরে মানুষদের মত গ্র্রামের মানুষেরাও ফেসবুক ব্যবহার করতে স্বাচ্ছন্দবোধ করে এবং তারা প্রধানত যোগাযোগ, তথ্য সংগ্রহ ও মজা পাওয়ার জন্য ফেসবুক ব্যবহার করে।
আমি ফেসবুক প্রেমিক নই। তবে আমার ফেসবুক একাউন্ট আছে। আর অনেক আগে ছেড়ে আসা জন্ম গ্রহণ করা আমার প্রিয় গ্রাম ও এর আশে পাশে কি হচ্ছে, কি ঘটছে তা জানার জন্য মাঝে মধ্যে ফেসবুকে ঢুঁ মারি।
একদিন দেখলাম ইউনুছ, ইউনুছ আলী ওর টাইম লাইনে ছোট্ট একটা ভিডিও আপলোড করেছে।
আমার ঘনিষ্টজনদের একজন হচ্ছে এই ইউনুছ আলী। ও গ্রামেই থাকে আর গ্রামের হাইস্কুলে দপ্তরীর চাকরি করে।
শিরোনাম হিসেবে লেখা ছিল ‘বাঁশো মাধ্যমিক বিদ্যালয়।’ আর তা দেখেই আমি ভিডিওটির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েছিলাম। সময় নষ্ট না করে সেই মূহুতের্ই ক্লিক করে ভিডিওটি দেখতে লাগলাম।


ভিডিওটি মাত্র কয়েক সেকেন্ডের। শেষ হয়ে গেল দ্রুত। কিন্তু আমার মনের মধ্যে দারুন এক ছাপ ফেলে গেল। আমার মনে হলো প্রধানত তিনভাবে ভিডিওটি আমাকে প্রভাবান্বিত করেছে।
১. আমি অবাক হয়েছিলাম
২. আমার মধ্যে নতুন এক প্রত্যাশার সঞ্জার করেছিল
৩. নতুন ভাবনায় ভাবিয়ে তুলেছিল।
আমি চিন্তাও করতে পারি নি বাঁশো হাইস্কুলের মত গ্রামের একটি স্কুল সন্ত্র্রাসের বিরুদ্ধে কখনো রুখে দাঁড়াতে পরে। কিন্তু বাস্তবে এটাই হয়েছে। আর সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে রাগ, ক্ষোভ, ঘৃনা প্রকাশ করে ছাত্র-ছাত্রী বিশেষকরে ছাত্রীদের প্রতিবাদ করা আমার কাছে এমন একটি বিষয় ছিল যা দেখে আমি বিস্মিত না হয়ে পারি নি।
সমাজে সবকিছু সঠিকভাবে চলছে না। বিশেষকরে অন্যায়, অবিচার ঘুর ঘুর করে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আর কোন প্রতিবাদ নেই বলে তা স্কুলসহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শক্ত গভীর শেকর গেঁড়ে বসছে।
এ ধরণের প্রতিবাদ প্রদর্শন সত্যিই এমন আশা করতে উৎসাহ জাগায় যে অন্যায়, অবিচার দূর হয়ে সমাজের সর্বত্র ন্যায় ও বিচারের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে।

সম্প্রতি অন্যায়, অবিচার ছাড়াও কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা হিসেবে দেখা দিয়েছে তা হচ্ছে সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড। সন্দেহ নেই যে অতিতের সব সময়ের চেয়ে বর্তমানে তথাকথিত সন্ত্রাসীরা অনেক বেশী মরিয়া ও তৎপর। তবে ভাল দিকটি হচ্ছে সরকার এ বিষয়ে সজাগ হয়েছে এবং সন্ত্রাস বিরুধী ও সন্ত্রাসীদের নির্মূলে অভিযান শুরু করেছে। কি্ন্তু অভিযান প্রধানত শহর কেন্দ্রিক বলে দেশের অনেক সচেতন নাগরিক ভাবতে শুরু করেছেন যে সন্ত্রাসীরা হয়তো এবার গ্রামের দিকে যাবে এবং গ্রামের মানুষদের সাথে মিলে মিশে নিজেদের আড়াল করে ভবিষ্যৎ এর জন্য তাদের অস্তিত্ব জিঁইয়ে রাখবে।
এভাবে যারা চিন্তা ভাবনা করেন আমি তাদেরই একজন ছিলাম। তবে এখন হয়তো আমি আর তাদের দলে নেই। কারণ আমি এখন অন্য রকমভাবে ভাবতে শুরু করেছি।
ভিডিওটি দেখার পর আমি মনে করি গ্রাম পর্যায় থেকে যদি এ ধরনের প্রতিবাদ প্রদর্শন অব্যাহত থাকে আর গ্রামের মানুষেরা একত্র হয়ে তাতে যোগ দেয় তাহলে সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসীদের ভবিষ্যৎ বলে এ দেশে আর কোন কিছুই থাকবে না।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন